বিজয় দিবস- ২০২১ সংখ্যা


একগুচ্ছ কবিতা


পুবাকাশ


স্বাধীনতা যেভাবে শুরু ।। রিজোয়ান মাহমুদ 

স্বাধীনতা যদি হয় সর্বশেষ বিন্দু – নাকফুল 
সতীত্ব ও সকালের রঙ বেঁচে থাকে বিলকুল। 
বিধবা অক্ষরে অমোচন কালোদাগ খুব মানো
উদজান বোমা মা’র , তবুও আমাকে পাশে টানো। 
সে – দিনও স্বরচিত নাম মেশিন মর্টারে ঘুরেছিল 
ঘুমঘোরে তোমাকে জড়িয়ে অন্ধকার শুয়েছিল। 
তুমি কী অশাস্য নিয়তিবাদী সে -আমি কিছু জানি 
আমি নিরাকারবাদী প্রকৃতির উপাসনা কিছু মানি। 
তুমি ব্যতীত  উপাস্য নাই উল্লম্ব আমার মন্দির 
আমি ছায়াসুর দেহের দরুদ আহা! পৃথিবী অস্থির।  

টেলিফোন ।। কাজী জহিরুল ইসলাম

জল কাদা ভেঙে যে উঁচুতে এসে দাঁড়ালাম
সেখানে তিনটি রাস্তা,
সাপুড়ের ঝাঁপি থেকে নেমে গেছে তিনদিকে।

জানি না গন্তব্য কোনোটির,
শুধু জানি এদের একটি নির্জনতা ভেঙে ভেঙে
আমাকে আলোর কাছে নিয়ে যাবে;
যদিও প্রগাঢ় অন্ধকারে নেই আপত্তি, ছিল না কোনো কালে।

অপেক্ষাকৃত দূর্গম রাস্তায়
পা বাড়াতেই পাতারা সশব্দে বেজে ওঠে অকস্মাৎ,
যা লেখা ছিল না স্ক্রিপ্টে।

আমি কান পাতি বৃক্ষের বিশাল কাণ্ডে, গাছের খোড়লে;
টেলিফোনের ওপাশে প্রমত্ত ঝড়ের কণ্ঠ।

ভয়াবহ দিনের গোপন সংবাদ দেয় সে আমাকে।
বৃক্ষশাখা থেকে হ্যাচকা-টানে টেলিফোনের রিসিভার তুলে নিই,
মুহূর্তে ঝুলিয়ে দিই শূন্যে, বাতাসের কানে;

সমস্ত অরণ্য নিভে যায় লজ্জাবতী পাতার স্বভাবে,
নিভে যায় এক অশুভ শব্দের কম্পন-সন্ত্রাসে।

বৃক্ষ হে, হে প্রাজ্ঞ ।। মুজতাহিদ ফারুকী

গাছেরাও মনের কথা বলে, এই কথা জেনে
বোবা হয়ে গেল তানপুরা
ধ্বনি আর সুর অর্থহীন ভেবে থমকালো বাসন্তী কোকিল
শব্দের সীমাবদ্ধতা বুঝে পৃথিবীর সব কাব্য বুক থেকে
ঘষে তুললো কাল হরফের সমস্ত ঘেউ ঘেউ;
ভাষার যা কিছু অহংকার ছিল তারা হয়রান হয়ে খুঁজতে বেরুলো
কোন জলে ডুবে আছে টাইটানিকের অপদস্ত শব।
কোনও এক অসফল কবি, ঝোলাব্যাগ থেকে
পাণ্ডুলিপি গোর দিল প্রবীণতম বৃক্ষের পায়ে
বিড়বিড় করে বলল, বৃক্ষ হে, হে প্রাজ্ঞ, মুরিদ করে নাও,
কাল ছাগলের কানে তুলে দিচ্ছি মায়ের ভাষার মন্ত্র
জনে জনে সংবেদন পৌঁছানোর শব্দহীন কারিগরি আমাকে শেখাও।

শব্দার্থ ।। রওশন হাসান

বিকেল ঝরে পড়ে সন্ধ্যার কোলে

টুপটাপ সান্দ্র পুনরাবৃত্তে
শূন্যতার ভাঁজ ভেঙে অকরুণ বাতাসে
আঁধার ঘনিষ্ঠ দিনের অন্তিমে
স্থির আকাশ জানালায় একরাশ মেঘ ছায়ার সংঘাতে ভ্রমনরত
যেন কোন জলধারা গড়িয়ে পড়ছে বিরামস্তম্ভিত
কিছু ক্লেদ, কিছু পরিতোষ এক রেখায় যেন অশ্বের মত
বারংবার ছুটে চলেছে এদিক-সেদিক l
রোমে রোমে গলে পড়ে ঘোরলাগা চোখের চাকচিক্য
দুলে ওঠে নামহীন উপমার মাকড়
আভাস-লাগা কবিতার চিত্তে
অচেতন অক্ষরের মত তোমাকে করেছি পাঠ
হন্যে হয়ে খুঁজেছি স্বাধীনতা তোমায়
দিগন্তলীন একটি পাখি, যুগপৎ পলক না-পড়া মুখ l

অপসংস্কৃতির চাদরে খসে পড়ে ছিন্ন-অঙ্গ বিকলাঙ্গ নদীর
মায়ের আঁচলে আর্তনাদ অতীত বর্তমানের
মহাপ্রাপ্তির বিজয়ের পঞ্চাশ বিবেকের দরজায় উত্তরহীন আঘাত হানে
কাঁদে ধর্ষিতা, কাঁদে শিশু, নারীর অসম্মান, অমর্যাদার বিষবাষ্প
আত্ম চীৎকারে কাঁদে বেনু, নুসরাত, আবরার
কি নৃশংসতায় পতাকা ওড়ে বাংলার শিরে
আমার হৃদস্পন্দনে তখনও ম্লান দুরত্বের মনস্তাপ
অন্তরাল ঊণতায় বেজে চলে সুবাসের মত আমার দেশ
যেন স্রোতস্বিনী কন্ঠরোধ স্তুপ আহ্লাদ
স্বাধীনতার রুপ দেখি মূর্চ্ছিত মানবতায়
মানুষে মানুষে প্রতিহিংসা, হত্যাযজ্ঞে লেখা মানচিত্রে
আরও একটিবার অধিকারের শ্লোগান মিছিল রাস্তায় নেমে আসে
একাত্তুর জেগে ওঠে ধমনীতে উত্তাল, ক্রসবিদ্ধ জাতির নাগালে
আমার আগামী সংকল্পগুলো বাঁকবদল করে আওয়াজ তোলে অসাম্প্রদায়িকতার নগরে-বন্দরে, অলিগলিতে
এক তীক্ষ্ণ রশ্নিরেখার সন্ধানে ছুটে চলেছি আপামর
নির্মল বাতাসে আমায় শেখাবে মুক্তির নিংশ্বাস
আমি আজও কেন বিজয় শব্দে মুহ্যমান হই, স্বাধীনতা শব্দটির অর্থ খুঁজি বিজিত বাংলায় l

মাটির সংসার ।। জিন্নাহ চৌধুরী

সন্ধ্যে হবার আগেই ভেঙে যাচ্ছে গল্পের আসর।
ভোর অব্দি ওরা অপেক্ষা করবেনা
ওরা বড় ধীর …
ওদের পূর্বপুরুষেরা যৌন আনন্দে নয় ততটা স্থির।
অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে তোমার আমার বাসর।
মাটি খুড়ে দেখো,উঠে আসবে শুধু মাটির সংসার।

আনন্দধারা বহিছে ।। বদরুজ্জামান আলমগীর
 
নানা জনকে নানা কাজে আনন্দ পেতে দেখি- কেউ উঁচু ব্রিজ থেকে বর্ষার জলে লাফিয়ে পড়ে আনন্দ পায়, কেউবা চাকু দিয়ে নিজের হাত ফালাফালা করে কেটে জিভ বের করে লিকলিক করে হাসে, কারো আনন্দ দৈহিক মিলনে, কেউ নিরানন্দের কাঠিন্যকে উৎসব ভাবে, কেউ ছুটন্ত তীরের সামনে বুক চিতিয়ে হর্ষে লাফায়, কারুরবা উল্লাস অন্যকে ঠেঙিয়ে! অবশ্য সিংহভাগ মানুষেরই আনন্দ অন্যকে হারিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনার উচ্ছাসে ।
আমি সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হই ঠিকানা হারিয়ে
ফেলে – কোথায় যাবার কথা ছিল যখন তার দিশা পাই না!
আমি কোনভাবেই মোকাম করে উঠতে পারি না পূর্বজন্মের স্মৃতি আর আগামী জন্মের পিছুটানের মাঝখানে একটি লোকগীতির সুরের মধ্যে কে তুমি ফুটে থাকো এমন পদ্মফুল – লোটাস, লোটাস !

উৎসের সন্ধানে ।। হাফিজুর রহমান

হৃদয় কা’বার উচ্চারণে প্রতিটি কবিতা
মানুষের কন্ঠে শুনে শুনে খুব ভালবাসি
শব্দে ছন্দে গাঁথা যেন মণিমুক্তা রাশি রাশি
কবিতা-শরীরে আঁকা বুঝি অনিন্দ্য মুগ্ধতা।

স্মৃতির শরীরে খুঁজি লোবানের তীব্র ঘ্রাণ
বেঁচে আছি নাকি মৃত,যেন বুঝতে পারিনা
অন্তর্গত দৃষ্টিপাতে দেখে কেন যে বুঝিনা–
পৃথিবী কীভাবে বাঁচে, বাঁচে অনিন্দিত প্রাণ !

অক্সিজেন সর্বত্র রয়েছে জানি পৃথিবীতে
তবু কেন বন্ধ হয়ে আসে দীর্ণ-দীর্ঘশ্বাস
জীবনের পরতে পরতে খুঁজি রসাভাস,
কিছু দিতে, আর কিছু তার অকাতরে নিতে।

এই দেয়া-নেয়া মানুষের প্রাচীন অসুখ
নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে মুগ্ধ আমি টেনে তুলি সুখ।

তুমি আসবে বলে ।। দীপংকর দে

আমি যা করি তোমারই জন্য করি
আমি যা বলি তোমারই জন্য বলি
তুমি আসবে বলে-

মাইক্রোফোনে শব্দ বুনি
কর্ণফুলীর তপ্ত হিয়ায় বৃষ্টি নামবে বলে-
গিটারে ঝংকার তুলি
তোমার রাঙা ঠোঁটে সুর উঠবে বলে।

সিরিষতলায় ছবি আঁকি
তোমার টেপা কপোলে রোদ খেলবে বলে-
পতেঙ্গা সৈকতে হাঁটি
তোমার নূপুরছন্দে বেলাভূমি দুলছে বলে।

বঙ্গোপসাগরে সাঁতার কাটি
তোমার শান বাঁধানো ঘাটে পৌঁছাবো বলে-
অভিধানে চোখ রাখি
তোমার প্রতিটা পৃষ্ঠা বেঘোরে পড়বো বলে।

মুসলিম হলে মহড়া দেখি
টিনের চালে ঝুঁটি বেঁধে রোদ নামবে বলে-
আকাশে আবির মাখি
রাজহংসীর মতো গ্রীবা তুলে হাঁটবে বলে।

হামিদর চরে অঝোরে কাঁদি
তোমার হাতে পায়ে নেইল পলিশে রাঙাবো বলে-
আবছা আলোয় নিশি জাগি
তোমার ঘুম ভাঙা চোখের পাপড়ি খোলা দেখবো বলে।

লিটলম্যাগে কবিতা লিখি
তোমার স্বপ্নডানায় নিরিবিলি ভাসবো বলে-
বাতিঘরে আড্ডায় মাতি
তোমার ভাগ্যাকাশে জোৎস্নাস্নানে খেলবো বলে।

আমি যা করি তোমারই জন্য করি
আমি যা বলি তোমারই জন্য বলি
তুমি আসবে বলে –

এগিয়ে যাও ।। রওশন রুবী

যা কখনো পাওয়া যাবে না
তার মেরু গমন করো না;
ঈশ্বর জানেন-
অর্জন ছাড়া মূল্য নেই শ্রমের,
তোমরা অর্জনে বহুমুখী ছোট,
ইন্দ্রিয়ানুভূতি হাতুড়ি আঘাতে ভাঙো,
পরিণতি চেয়ে কেন মিছে ব্যঞ্জন?
জীবনযাপন তরতাজা গোলাপ নয়
সাধুও জানেন বলে-প্রস্তুত করেন সংযম,
বহিরাগতের চেয়ে নিত্য নুনে থাকা ঢের সুপেয়,
উদ্বৃতি উপসংহার পদ্য আর গদ্যে থাকুক,
তোমারা শান্ত হও, নুনে তেলে থাকো,
জেনে রেখো, ঘামই করেছে, করবে সুখের প্রসব।

মুদ্রা ও মান পাশাপাশি। মান নিয়ে যাও,
মনে রেখো, পেছনের পা তার ছায়া মাড়াতে পারে না,
পাত্র ঝালাই করে সরাবে ডোবাও ওষ্ঠ ও আঙুল,
তোমাদের কথা হবে একদিন জানি-
আন্দোলন, মিটিং, মিছিলের উপপাদ্য।
কাটিংয়ে ফায়দা লুটে যারা নির্মাণ করে স্বপ্ন,
তারা নিপাত যাক,
এগিয়ে যাও- চিরকাল খেটে খাওয়া সাধারণ…

শিল্পের সপক্ষে ।। মহিবুর রহিম 
(মুশতাক খন্দকার ও ক্বণন শিল্পীদের)

কখনো এমন হয় চারপাশে শুদ্ধতম ঢেউ নেই
নগরে আছড়ে পড়ে ব্যধিগ্রস্ত দীর্ঘশ্বাস
বাতাসে সিসার গন্ধ, ঘুরে ফিরে অজানা উদ্বেগ।
কর্পোরেট নগরেতে দিনের ভিতরে রাত হানা দেয়,
একটা গোলক ধাঁধা ধবধবে সাদাকেও করে দেয় ম্লান
কেমন নিষ্প্রভ লাগে যত সব গৌরবের কৃতিত্ব সম্ভার!

সবকিছু ঢেকে দিয়ে নামে এক মহাধূম্রজাল
উড়ায় শঙ্কার ধূলো, দীর্ঘ হয় নিঃসঙ্গতার ছায়া
ভূত আর ভবিষ্যত একাকার শুধু নেই বর্তমান!

এমন দুঃসহ দিনে জ্বলে এই
মানবিক মন
বুক থেকে সহসাই নেমে আসে ক্ষোভ প্রতিবাদ
লোকে যাকে দ্রোহ বলে, বিনির্মাণ শিল্পের সপক্ষে
কবিতা কবিতা বলে আছড়ে পড়ে চেতনার উপকূলে!

জোনাকি যেমন ।। সাবিনা পারভীন লীনা

যে ভাষায় আমার আপনজন
কেউ আর কথা বলবে না,
আমি সে ভাষারই কবি
যে নদীতে আর কোনদিন

বান আসবে না

আমি সেই নদীরই মাঝি
তবু আশায় বুক বাঁধি
পিদিম জ্বালিয়ে রাখি
আঁধার রাতে আলো বুকে
যেমন দু’চারটা জোনাকি!

চাষাবাদের কৌশল ।। ওমর বিশ্বাস

প্রেমে আন্দোলিত হয়ে কোনো বৃক্ষ জন্মায় না
মানুষই শিখেছে যত চাষাবাদের কৌশল
প্রেমের শুদ্ধতা দেখে বৃক্ষের পত্রপল্লব পুলকিত হতে পারে
হতে পারে প্রশংসায় মুখরিত। কোনোটাই নিশ্চিত না
আবার কোনোটা ফেলে একাকি ঘোরের মধ্যে দিয়ে
কিছুটা দূরত্ব যায় পাড়ি দেওয়া তবু আসল না কোনোটাই।

হাতের মুঠোয় থাকে আকাশ আমার কল্পনায় আরো
আকাশের সৌন্দর্য চুম্বনে কাটে কারো সহস্র স্বপ্নের ঢেউ
কে শিখেছে কি করে পাল্টায় রং ভাঁজখোলা কারুকাজ
দিন-রাত্রি গোধূলি প্রান্তরে। কে জানে সামনে ভবিষ্যৎ
মানুষই শুধু পারে স্বপ্ন জয়ে যোগ দিতে স্বপ্নের মিশিলে
যেখানে কখনো আগে শেখেনি অন্যকোনো মাখলুকাত।

এখন তো আরো মুঠোয় এসেছে রোদ তাপের কৌশল
বেলা যেতে না যেতেই গুনে ফেলি কত ঢেউ আকাশ ছুঁয়েছে
শতাব্দী অতীত তুলে সময়ের সুড়ঙ্গে করাই পার
বেলা বাড়ে পুরোদস্তুর নীলিমা নেমে আসতে চায়। এই কাল।
কতটা নির্ঘুম থাকে পৃথিবী কালের পর কাল তারাগুলো
সবার হৃদয় খুঁড়ে উঠে আসে জোছনাকাল মানুষের বসবাস

আমাদের প্রার্থনা ।। খোরশেদ মুকুল

করোনার কাল থেকে মুছে যাক বেদনার পলেস্তারা
ফিরে আসুক মেঘডুবা চিকচিক নির্মল হাসি
হারিয়ে যাওয়া প্রজাপতি জ্বলে উঠুক জোনাকি হয়ে
সংসারে খেলা করুক ফুটফুটে জোছনা

অসুস্থ পৃথিবী থেকে বিদায় হোক অদৃশ্য দৈত্য
দৈত্যের নৃত্যে ভাটা পড়ুক খোদায়ী মদদে
মাথা ঠেকাই, হাত তুলি পরোয়ারদেগার
কবুল করো বিশ্বাসীর বলা- না বলা আর্জি
মেঘের সিঁড়িতে বসে তসবি জপি বৃষ্টির
ফোটায় ফোটায়

অনিঃশেষ দীর্ঘশ্বাসে ভারি আজ যাপিত জীবন
নিরুপায় নিরুপমা, অপেক্ষা কালি মোচনের
গায়েবি জোয়ারে ভেসে যাবে হালের নর্দমা

সূর্যকুসুম ।। রওশান ঋমু

কপালের ঠিক মাঝখানে প্রত্যেক দুপুরবেলা
সূর্যকুসুম উল্কি পরায় রক্তজবা লাল
কপাল ঘেঁষে খুচরো চুল
ছায়া ফেলে শব্দহীন জল প্রপাতের

লাল সূর্য বিছিয়ে রাখি শাড়ির সবুজ জমিনে
মাঠে যুগলবন্দি রঙ
মহাকালের মন্দিরে বিস্তার করে উত্তরাধিকার

মাছের চোখে যেমন নদীর স্মৃতি
মাটিগন্ধ সেলাই হয়ে থাকে খরা ও বন্যায়
তেমনি প্রিয়তম লাল – সবুজ
রক্তের ক্লান্তি মুছে ওঠে প্রভাত বেলায়

ভোরের লাল আর সন্ধ্যার সবুজ
দুই ফোঁটা অশ্রু
চিকচিক করে চোখের দুই কোণে।

সিগনেচার ।। মাসুদুর রহমান মাসুদ 

সবুজের মায়ার ভিতর
জেগেছে যুগের পরিক্রমা নিরন্তর। 
মানুষ ক্ষয়িষ্নু জীবনের পথে
অদ্ভুত এমন সব স্বপ্ন দেখে। 

যা ভুল যা সত্যি যা নেই 
নিজস্ব কল্পনার কাচারিতে।

প্রার্থীত চেতনা সমুদ্রের 
মুখ গুজে বালির বাঁকলে। 

জীবন কি শুধু আকাঙ্ক্ষার 
স্বপ্ন বোনা অদ্ভুত অচেনা 
আগামীর সিগনেচার ঋণপত্রের।

মহব্বত ।। আলাউদ্দিন কবির

১.
মুখে বলে দূরের মানুষ মন তো বলে কাছের
এই প্রীতি এ মহব্বত অজানা এক ধাঁচের
একটুখানি টোকায় প্রিয়, ভাঙবে না এই প্রীতি;
প্রীতি-রাখার হৃদয়খানি তৈরি নয় কাচের।

২.
নামেও নয় কামেও নয়, নয়তো কিছু করতে
তোমার সনে মহব্বত নয়তো কোনো শর্তে
তোমার মাঝে এমন-কিছু পেয়েছে এই হৃদয়;
যা পেলে কেউ কারো জন্যে, পারেও প্রিয় মরতে।

৩.

স্বাভাবিক ও অ-স্বাভাবিক, ওসবে নেই খেয়াল
আমার মহব্বতে নেই কোনো রকম দেয়াল
যেখানে যাই তোমাকে চাই সকল কথা মেনেই;
বোকাসোকা মানুষ আমি, নই তো কোনো শেয়াল।

বুদ্ধিজীবীতার দিন ।। আরিফুল হাসান

গন্তব্য আমাদের কোাথায় তা কেউ জানে না
একটি অনিশ্চিত সন্ধ্যার দেশে দুটি কবুতর
খোঁপার লাবণ্য ঝেড়ে ফেলে লাল আকাশে
মেঘেরা মন খারাপ করে চলে যেতে দেখছে।

সড়কদ্বীপে আটকে আছে গতিবিধির পরত
মাঠের পরে মাঠ ভিজছে অশ্রুনদীর ধারায়।

মন্তব্য করুন

এখানে মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন