কবিতাগুচ্ছ


বাসব রায়


পুবাকাশ


১. রাখালের ঘুড়ি

একটা সুতোছেঁড়া ঘুড়ি আকাশকে 
সহজেই পেয়ে যায় 
মাঠের রাখাল আকাশ চায় না 
ঘুড়িটাকে চায় 
ঘুড়িটা মিলিয়ে যায় মেঘ আর নীলে 
হয়তো ওখানেই সে তার ঠিকানা গড়ে 
বর্ণিল ঘুড়িটাকে হারিয়ে 
রাখাল আকাশের দখল নিতে চায় 
ওর ডানা নেই বাতাসে উড়োনোর -৷ 
আবার নতুন একটা ঘুড়ি বানাতে বসে 
কঞ্চির আঁঠায় রঙিন কাগজ দিয়ে 
ঘুড়ি হয় , লাটাইয়ে সুতো ভরে 
সারাদিন ঘুড়ি উড়োয় – ৷ 

২. রিরংসা 

বর্ষায়ও আগুন জ্বলে 
অন্তর- বাহির সবখানে 
খুব কাছেই পিপাসা অপেক্ষায় 
রাতের আগুন আরও জ্বালা ধারায় ৷ 
আত্মবিস্মৃত হই 
রক্তের কণায় কণায় আস্ফালন 
প্রজ্বলিত আকাঙ্ক্ষায় 
কামনার দহন ৷ 
নিজেকে ডোবাই 
নিজেকে হারাই 
ক্লান্তির কাছে আত্মসমর্পণ করি – 
মরেও মরার সাধ জাগে আবার ৷

৩. অদৃশ্য চাঁদ

এতকাল একটা ঘুট্‌ঘুটে অন্ধ চোখে পৃথিবীকে দেখেছি – 
কৃষ্ণগহ্বর থেকে আসা আমি নতুন আগন্তুক 
পৃথিবীর বড় আবিষ্কার তেলের ঘানি 
বলদ ঠুলি চোখে বৃত্তাকারে অনবরত হাঁটছে 
বিষয়বস্তুর কিছুই সে জানে না ৷ 
কোন ঠুলি ছাড়াই অনেকে দেখতে পায় না 
লালকে কালো দেখে কিংবা হলুদকে ধূসর 
বুকপাঁজরে জমাট বেঁধেছে মহাকালের দ্বন্দ্ব 
সে সকাল দেখে না , দেখে না মিষ্টি বিকেল 
সে শুধু রাত দেখে যেখানে চাঁদের দেখা মিলেনি হাজার বছর – ৷ 

৪. নেতিবাচক নয় ইতিবাচক 

একটা আংশিক ছোবলে নেতিবাচক ভাবনারা দোদুল্যমান 
ভাবনাগুলো নতুন করে আলো আর অন্ধকারের পার্থক্য বুঝতে চেষ্টা করে 
আমি ইতিবাচক হতে বলি 
একদম সোজা এবং দৃঢ় 
প্রচণ্ড ঝড়ও যেখানে লেজগুটিয়ে পালায় 
বিচ্ছেদের সেতার সে বাজবেই 
ধরে নিয়ো সবটুকু প্রেম সেখানেই জমা 
বাঁশিতে যমুনার ঢেউ তুলো , দেখবে তীরে নিষ্পলক দাঁড়িয়ে শাহজাহান – ৷ 

৫. আবার নতুন সবুজ 

খবরে প্রকাশ পৃথিবী ছোট হয়ে আসছে 
এর আয়ূ ক্রমশঃ নিম্নগামী 
সঙ্গতকারণে , বোধহয় মনগুলোও সমানতালে ছোট হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে ; 
এইতো সেদিনও আকাশটাকে বিরাট বড় মনে হয়েছিল , বিশাল– 
নীলে নীলে আদিগন্ত কী অপূর্ব সৌন্দর্য ! 
শ্রাবণের পাগল মেঘগুলো কালো রঙে আকাশটাকে ঢেকে দিয়ে ছোট করে ফেলেছে -৷ 

একটি মন পৃথিবীর চেয়েও বড় হতে পারতো 
বিস্তৃত অন্তরীক্ষে ছড়ানো থাকতো শুধু ভালোবাসা আর ভালোবাসা —–! 
সংকোচনের সংকোচে ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে চারপাশ , সংকুলান বলে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই – ৷ 

কষ্টগুলো চাপা থাকে ছোট্ট অন্তঃকরণে 
নিভৃতে তা জ্বলে – 
অতঃপর একদিন ধুঁকে ধুঁকে মৃত অন্তরটির সৎকার হয় –
দু’একদিনের স্মৃতিচারণ মাত্র 
অবশেষে ভুলে যাওয়া মাটিতে আবার নতুন সবুজ – ৷


বাসব রায় : কবি। শিক্ষক, রাজবাটি , দিনাজপুর বাংলাদেশ ৷

মন্তব্য করুন

এখানে মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন