কবিতা


ফেরদৌস নাহার’র পাঁচটি কবিতা।। পুবাকাশ


এক. শব্দঋণ বেড়ে ওঠে

কতদিন পর মাঝরাতে বাড়ি ফিরছি 
তোমার বাড়ির পাশ দিয়ে যেতে যেতে 
গানের অন্তরা ভুলে যাওয়া দিনগুলো মুখ টিপে হাসে 

গ্রীষ্মকাম হুল্লোড়, রাতের মৃদু বাতাস নাম ধরে ডেকে ডেকে 
তাসখন্দের বিস্তৃত পথে অপেক্ষমাণ বনিতার বেড়াল ছুঁয়ে ছিল 
কালো গাড়ির খদ্দের আজও অন্ধকারে বেড়াল-নারীকে তুলে নিয়ে যায় 
দোকানে সাজানো মাত্রুস্কার মিলিত কোরাস সেদিনও গান ধরেছিল 
খুব কি দুঃখের গান ছিল সেসব 

দুই. ডাকছে কেউ পালানো স্বভাব

এই যে ঘর পালানো অভ্যাস, ওটা এখন বেড়ে গেছে 
নামি-দামি কিছুর কিছু পরিমাণ টানছে না, টানছে পথ, পাথুরে শপথ 
ঘুমলে স্বপ্নজাল মৃদু টোকা দেয়- এই ওঠো! তোমার না মাছ ধরতে 
যাবার কথা। স্বপ্ন কথা বলে 
শশব্যস্ত দেবতারা গাঢ়রূপ অন্ধকার মাখিয়ে দিয়ে বলে- 
ঘুমা, ঘুমিয়ে থাক তো! কোত্থাও যেতে হবে না তোর

আমি কিন্তু পালাব। ডাকছে কেউ পালানো স্বভাব। পথের কি অভাব 
ঘরে ঘোর মাথাচাড়া জবাব, কিছুই পারছে না ঠেকাতে
নাম নেই, নাম দেবো, লাইন করে দাঁড়াও যাত্রা শুরু হবে 
টিকেটের প্রথম ঘরে নিজের নাম দেখে চমকে উঠবো না একেবারে

তিন. হ্যালুইন নাই

অতঃপর আমার অসুখ হল, আমি দিনরাত হ্যালুইনের চরিত্র দেখতে দেখতে কখনো ঘুমাই, কখনো জেগে থাকি। অবশেষে আমার রাত দিন পালটে গিয়ে সে এক অদ্ভুত টাইম টেবিলে এসে দাঁড়াল। মনে মনে অপেক্ষা করি কবে বাড়ি যাব, কবে সময় মিলিয়ে ঘুমবো জাগব 
তারপর কত বছর উড়ে উড়ে ক্লান্ত ডানায় আঁকিবুঁকি কাটতে কাটতে তোমাকে পাঠালাম সাধারণ চিঠি। ভেবেছিলাম যাবে না। কিন্তু ঠিক ঠিকতিই পৌঁছল তা। নিদ্রা ব্যাঘাতজনিত দুর্ঘটনাসহ টাইম টেবিল পরিবর্তনের সংবাদসমূহ, সব। হ্যালুইনের চরিত্রগুলো সারারাত জেগে পিছনে পিছনে দৌড়ায়। আমি বাড়ি গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার দেশে কোনো হ্যালুইন নাই

চার. একটু ধোঁয়াটে

মুছে যাচ্ছি ধীরে ধীরে। মুছে যাওয়া আসছে ফিরে ফিরে 
চোখের উপরে হাত রেখে অন্ধকারের পরিবর্তে ছবি দেখি
কতকাল এভাবে চলবে জানি না
 
ডাক দিচ্ছ। শুনতে পাচ্ছি না। শুনতে চাই না। অভিযোগ নেই 
অভিযোগ না থাকাও একরকমের অভিযোগ, এসব জেনেছি 
নিঃশ্চুপ থাকা থেকে

তীর্থে আছি। ফিরে এসে বলব, কেমন কেটেছে দিন, কেমন ছিল
মাঝরাতের ঘুম ভাঙা বৃষ্টি। অসভ্য ইঙ্গিতে কী কী ঘটেছিল সব বলব 
এখন দেখ তো চিনতে পারো কিনা

পাঁচ. মৃত্যু রেসিপি 

এখনো আমার একুশ বছর বয়স 
অভিমানের জামা এখনো নামাইনি গা থেকে। মুছে যাচ্ছে লেবুঘ্রাণ 
পিয়াজু বুটের ইফতার সন্ধ্যা। ওই তো মা জায়নামাজে 
পিছন থেকে দেখতে দেখতে পালিয়ে যাচ্ছি ছাদে 
এখন আমি খুবই নিজের, মৃত্যু রেসিপি শেখা 

তুমি আমাকে মৃত্যুর রেসিপি দাও আর আমি মৃত্যু রান্না করি 
কাল আকাশে চাঁদের অসুখ তীব্র অভিঘাতে 
টুকরো টুকরো জ্যোৎস্না হয়ে ছড়িয়ে পড়ল ঘাটে 
সেখানেও দড়ি-কলসি অপেক্ষাতে 
সারাটা দিন কেটে গেল, মৃত্যু এসে নামে সন্ধ্যার ট্রেন থেকে 


ফেরদৌস নাহার : আশি দশকের কবি-প্রাবন্ধিক-গীতিকার-পর্যটন প্রেমী। এখন কানাডা অভিবাসী।

3 মন্তব্য সমুহ

  1. অসাধারণ লেগেছে প্রতিটি কবিতা। কবি আমার প্রিয় কবিদের একজন। তাকে অজস্র অভিনন্দন জানাই।

  2. আহা!
    মুগ্ধতায় পরিপূর্ণ!
    শুভকামনা নিরন্তর প্রিয় কবি।

মন্তব্য করুন

এখানে মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন