একগুচ্ছ কবিতা
চন্দনকৃষ্ণ পাল
পুবাকাশ
১. আত্মকথন-৩
ঘাসের ডগায় জমে থাকা
শীত সকালের শিশির বিন্দু করতলে জমিয়ে নিয়ে
ঠোঁট ও গালে ঘষার দিন আজ আমার তো নেই।
আমার এখন খররৌদ্রে ঝলসানো দিন তীব্র শাসায়
চিল শকুনের চক্ষুগুলো তাকিয়ে থাকে চোখের পানে।
খুব অসহায় সময় আমার
জলধ্বনি শুনবে বলে কান পেতে রয়
জলধ্বনি যায় না শোনা
মরুর বাতাস ঢেউ তুলে যায় বালিকণা গায়ে মাখিয়ে,
তোমরা কিছু নিরেট পাথর তীব্র চোখে তাকিয়ে দেখো।
২. সুখ
ওর হাম হাম নেই,
নেই টাঙ্গুয়ার হাওর
নীলাদ্রি লেক ওরে কাছে তো টানে না
শিমুল বাগান থাক লাল বা সবুজ
ওর তাতে কিবা আসে যায়!
সারাটা বছর ওর সিডিউল থাকে না তো
দেশ ভ্রমণের
খাওয়া ঘুম দৈনিক কাজের ফিরিস্তি আর
জলসা ও বাংলাতে সিরিজের ধুম দেখে
কাটে তার দিন।
কে কিসে সুখ পায় সেই শুধু জানে।
৩. অপেক্ষা
কার হাত ধরে তার এই আগমন জানা হবে না তো।
দীর্ঘ একুশ মাস দূরে থেকে রাঙালো সে চোখ
তীব্র দহনের জ্বালা সয়ে শত শত রাত্রি হলো ভাের
সবকিছু মনে রেখে দিন যাপনে গ্লানি মেখে গায়ে
পা ফেলে গেছি ক্রমাগত….
যখন সুবর্ণ দিন চোখের সামনে রাখে স্বপ্নের ছায়া
তখনই ঘৃণ্য কালো দাঁতে সে ছোবল বসায়
নীল বিষে জর্জরিত হয়ে কাটে রাত আর দিন।
জানি বেদনার রাত শেষ হবে,
গোলাপি আভায় গাছের পাতারা হবে আমাদের সাথী।
সেই ভোর খুব দেরি নেই।
৪.রায়
ধূসর দেখলেই মরু ভেবে বসা ঠিক নয়।
নানান সমীকরণে প্রকৃতি সাজায় তার রূপ
ধোঁয়া ও কুয়াশার আবরণে নিজেকে জড়ায়
তোমার চোখের আয়ু আর কতো দূর?
মগজও স্থির আছে কী না কে জানে বলো।
তাই বলি, রায় প্রকাশের আগে
প্রমানপত্রের ঠিক ঠিকানায় মনোযোগ দাও
তারপর রায় পড়ো।
স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ুক প্রকৃতি।
৫. স্বাধীনতা
এই নাও, খাঁচার কপাট খুলে মুক্ত করা হল বন্ধন
এবার তোমার দিন-
আদিগন্ত মাঠের সবুজ আর আকাশের নীল
সব তুমি ছুঁয়ে দেখো, চেখে দেখো স্বাদ ও গন্ধ
ফেরার তাড়া নেই আর
সারা পৃথিবীই তো আজ তোমার বাসগৃহ
তোমার ভ্রমণস্থল, দিনরাত একাকার করে
তুমি উপভোগ করো এ জীবন,
বুঝে নাও শান-শওকত
আমার দুচোখ আজ বিপরীত মেরু ছুঁয়ে রবে
কোন পিছুটান নিয়ে জড়াবো না তো আর।
স্বাধীনতার স্বাদ যদি যদি নিতে পারো তুমি
সব চেয়ে সুখি হবো
বুকে হাত রেখে বলি বিদায় বেলায়।
চন্দনকৃষ্ণ পাল: কবি ও ছড়াকার। ডেপুটি ডাইরেক্টর- বিআরইবি।