কবিতা


আরিফুল হাসান’র একগুচ্ছ কবিতা


১. প্রশ্ন

নিভন্ত আগুনের মাঝে
পড়ে আছি, পুড়ছি না, এ এক যন্ত্রণা
না দগ্ধ, না দহন! তবে কি প্রেম নেই?
প্রেমে আছি, সহনীয় নয়
তাহলে আমি কি মৃত, জীবন-নাটকে?


২.বেহুলার ক্রন্দন

তাপস, নিজেকে রক্ষা করতে জল ঢালে বৃক্ষের গোড়ায়
উষ্ণপৃথিবীর পরিমণ্ডলে আটকে আছে প্রেমের গোপাল
সর্বনাশ যা হওয়ার হয়েছে। এখন শুধু যত্ন নাও বাগানে
খেয়ালের আটকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড তোমার, তাপস
শুনতে পাচ্ছো ঘুনপোকার চেরাইসংগীত? তাহলে কি এ
অন্যরকম যন্ত্রণা, না ধরা যায়, না তাকে ছুঁয়ে দেয়া যায়


৩.মধুমাসে অমাবস্যা

পাকাফলের গন্ধের মতো অন্ধকারও মোহাচ্ছন্ন করে
কবুতর পায়ে চিঠি পড়ে থাকে বেগানা দরজার কাছে
ভুল মানুষ উত্তর লেখে, অন্ধ পড়ে বর্নমালার চিঠি।
দুয়ার খোলে বাইরে এসো, গাঢ় আঁধার; ছমছম রাত
তুমি স্তব্ধ হয়ে শোনো পাতাদের কথা, ছায়া-কবিতা
অবিরাম ভাঙনের মাঝে জৈষ্ঠ্য মাসেও অমাবস্যা নামে।
তুমি চিঠির উত্তর লিখো, নানা রং নকসার কারুকাজে
দেয়ালের ওপাশ থেকে শুনতে পাবে পথশিশুর কান্না।


৪.তারার ঝিলিমিলি দেশে

পথিকের পথ ভুল হলে গন্তব্য পালটে যায় মানচিত্রে
অগুণতি আষাঢ় এসে ভিজিয়ে দেয় বুকপকেটের তাপ
বাসনা চরিতার্থ হলে কেটে পড়ে একদা প্রেমিক।
আজন্ম যাযাবর কেউ রোজনামচায় লেখে পথের ধূলো
ওড়
কোরাসের কণ্ঠে কেউ জেগে উঠে ঘুমভাঙা পাখি
দিনের চরিত্র তখন রাতের দেউলত্বে ব্যাকুল বেহায়া।


৫.পাকাফলের ঘ্রাণে

কোনো এক স্মৃতি মনে পড়ে। সে বহু পুরনো
তখন পরিবার ছিলো, বাবা মা ছিলো
এমন জৈষ্ঠ্যের দিনে, আম-কাঠালের সুঘ্রাণে
ম-ম সারাটা বিকেল, রাতের পূর্ণিমা পাঠশালা
মনে পড়ে, বাবা ছিলো। বাবার ঘোড়া ছিলো
সে বহু আগেকার কথা, আমাদের আম গাছে
মিঠে-কাচা আমগুলো পাকতে পারতো না
এমন দুরন্ত তিয়াস, আমি আর কোথা পাবো
সেসব কথা, আজ আবার মনে পড়ে মধুমাসে
যখন ফলে নামে আমরা খাচ্ছি ফরমালিন বিষ


৬.কাঠালের আঠা

লোকে বলে, কাঠাল একটি ফল এবং তার আঠা
উপমেয় কবিতার সাথে, যেমন পিরীতের
রং মেখে নব্য কিশোর হারায় কাণ্ডজ্ঞান, ভাষা
তেমনি কাঠালের আঠা লেগে থাকে, ছুটে না।
প্রেম এক ফলদ ব্যারাম। যার ধরে, সর্বনাশ করে
একেবারে ফালাফালা করে দেয় আশেকের প্রাণ।


৭.আমসত্ত ও দুধ

কিশোরি-বুকের মতো, গাছে আম
আমের ভেতর এক পরিযায়ী বধূ
আহা ভ্রমর, ভ্রমর! কই যাও?
এই মধুমাসে, নোঙর ফেলো ঘাটে
ভিরাও বারেক তরী, এসো, এসো
কালো গাভীর নির্জলা দুধের সাথে
হাড়িভাঙা আমের রস চেখে দেখবে না?


৮.চোখের কারাগার

মনে হবে সবকিছু দু’চোখের ভুল
মনে হবে মরিচিকা শুধু খেলা করে
ভুলেও ভেবো না তুমি পর হয়ে গেছি
ভুলেও ভেবো না তুমি দূরে সরে গেছি।
আমি তো আছি, এই দেখো আয়নায়
তোমার এলোচুল গয়নায়
আমি তো আছি, বারবার আছি
তোমার হৃদয়পুরে চিরদিন বাঁচি।


৯.কালের খোয়াব

দরজাটা একটু ভেজানো। কেউ একজন
খুলে বের হয়েছে মাত্র। রাত অনেক
বাইরে শেয়ালের ডাক, গভীর আঁধার
ছমছমে সবকিছু, তবুও কেউ বাইরে যায়
মনে রেখো, দরোজাটা একটু ভেজানো
রাতের বাতাস, হু-হু করে ঢুকছে ঘরে
যেনো তুমি মনে করতে পারো, চাঁদরাতে
এমনই একদিন তুমি ভবঘুরে ছিলে।


১০.ধাতবফলের স্বাদ

কেউ পায়নি। আমরা ক’জন ঝড়ের মুখে
কুড়িয়ে আনলাম শীষা ও চকচকে পাথর
কারো মুখ দেখা যায়নি, আমরা জেনেছি
তারপর পাথর ও ধাতব সভ্যতা মিলমিশ
আমাদের পেটের ক্ষুধা আগুন হয়ে জ্বলে
মরুকরনের চক্রান্তে ভুল পথে আত্মনাশে


আরিফুল হাসান: তরুণ কবি ও গল্পকার।

১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

এখানে মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন