রেফায়েত কবির শাওন
সবে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়েছি। সাহিত্যের টার্মিনলোজি গুলোর সাথে একটু একটু পরিচিত হচ্ছি। John Keats পড়তে গিয়ে নতুন টার্ম শুনলাম, Negative Capability. ক্লাসে ব্যাপারটা নিয়ে জটিল আলোচনার পর, সান্ধ্য আড্ডায় পূর্ব পরিচিত এক বড় ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম ব্যাপারটা কি। নজরুলের বিদ্রোহী কবিতার লাইন উদ্ধৃত করে এক বাক্যে উত্তর দিলেন “জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি” । আসলে Negative Capability মানে হল নিজের ব্যাক্তিগত সুখ দূ:খের সীমাব্ধতার বাইরে গিয়ে নান্দনিকতার চর্চা করতে পারা। এই ছোট ঘটনাটির উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, সহজ কথায়, সাবলীলভাবে, কাছের উদাহরণ দিয়ে সব কিছু ব্যাখ্যা করার, বোঝার এবং বোঝানের ক্ষেত্রে আমার এই বড় ভাইয়ের দক্ষতার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া।
ঘটনাটি যখনকার তখন আমি অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র আর মীযান ভাই মাস্টার্সের। এর আরো বেশ আগে থেকে তাঁর সাথে, তাঁর সাহিত্যকর্ম আর বাগ্মীতার সাথে পরিচয়। এখন তিনি বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপদে আসীন কর্মকর্তা। গত কয়েকবছরে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ভ্রমণ করেছেন ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া আর এশিয়ার বিভিন্ন দেশ। তাঁর অসাধারণ ভাষাজ্ঞান আর সাহিত্যবোধের কারণে ফেসবুকে লেখা ভ্রমণবৃত্তান্তগুলো হয়ে উঠেছিল সুখপাঠ্য। দাবি উঠেছিল বই আকারে প্রকাশের। অনেকদিন পর দাবী পূরণ হল। কাল হাতে পেলাম “শেক্সপীয়ারের বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ” । বইয়ের নাম দেখেই বোঝা যায় এটি নিছক ভ্রমণের ডায়রি এন্ট্রি নয়। বরং আমাদের অবস্থান সাপেক্ষে অন্যদেশকে জানা। লন্ডনের ক্ষাণিক দূরে Stratford Upon Avon নামক ছোট্ট শহরে শেক্সপিয়রের বাড়ির দেহলিতে রবীন্দ্রনাথের মুর্তির সাক্ষাত পাওয়ার সৌভাজ্ঞ আমার দু’বার হয়েছে। কিন্তু এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আর এই দুই কাব্য প্রতিভার সম্পর্ক উদঘাটন আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে সম্ভব হয়নি, কিন্তু এই লেখক তা করেছেন। এভাবেই তিনি ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখেছেন ইউরোপ এশিয়ার অনেকগুলো দেশ, সভ্যতা, সংস্কৃতি।
মুজতবা আলি তার ভ্রমণ কাহিণীতে অসাধারণ সব চরিত্র সৃষ্টি করেছেন। তবে হালের অনেক লেখক তাঁকে অণুকরণ করতে গিয়ে উদ্ভট সব কান্ড করছেন। কেউ কেউ জোরজবরদস্তি কঠিন কঠিন বাংলা শব্দ ব্যবহার করছেন আবার কেউ কেউ অযাচিত ভাবে টেনে আনছেন সুন্দরী তরুনি নারীকে আর তার মুখ থেকে বের করছেন ইতিহাস আর সভ্যতার পাঠ। মীযান রহমানের এই বইটি এইসব অপ্রয়োজনীয় বাহুল্য বর্জিত। তাই ৬৪ পৃষ্ঠার ছোট আকারের এই বইটি পাঠে কমসময়ে অনেক কিছুই জানা যায়, সেই সাথে পাওয়া যায় সহজ সরল ভাষায় সাহিত্য পাঠের আনন্দ।
এই বইয়ে লেখা কিছু কাহিনী মীযান ভাইয়ের ফেসবুক পোস্টে আগে ভাগেই পড়া। কাঠমুন্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দর থেকে নাঙ্গরকোট যাওয়ার পথে আমার সহযাত্রী বন্ধু Syed Mohammad Harun যখন ড্রাইভার কৃষ্ণাকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে তার কাছ থেকে নেপালের সমাজ ব্যাবস্থা থেকে শুরু করে অর্থনীতি, রাজনীতি – সব তথ্য আদায় করছিলেন, তখন মীযান ভাইর ফেসবুক পোস্টের কথা মনে পড়ে, ভাবি এসব আলোচনা – অভিজ্ঞতা নিয়ে আমিওতো ফেসবুকে দু’চারলাইন লিখতে পারি ভ্রমন বিষয়ে । মীযান ভাইর পরামর্শ আর সহযোগিতায় সেই ছাত্রজীবন থেকে কর্মজীবন – অনেক কিছুই তো করলাম, এবার না হয় তাঁকে অনুকরণই করি। আর এসব লিখে পেয়েছি অনেক ভালবাসা। ধন্যবাদ তাঁকে, কৃতজ্ঞতা তাঁর প্রতি। আমার মনে হয় আমার মত অনেকেই বইটি পড়ে উপকৃত হবেন।
রেফায়েত কবির শাওন : প্রভাষক,ইংরেজি।