গুচ্ছ কবিতা
দেলোয়ার হোসেন
পুবাকাশ
দাগগুলো মুছে যেতে যেতে শিশুর হাত ছুঁয়ে দেয়
আমাকে ভয় পেও না, এই তো আমি মরে যাচ্ছি
পৃথিবীতে খুব সহজেই মৃত্যু আসে
মৃত্যু কোনো অস্বাভাবিক বা কাকতালীয় ঘটনা নয়
মরে যেতে হয় বলে মরে যাচ্ছি
সুফলা পৃথিবীতে তোমরা কিছুক্ষণ থাকো
আমার মৃত্যু কোনো পাঠ নয় বা পরিক্রমাও নয়
স্লেটের বুকে চকপেন্সিলের হিজিবিজি দাগ
দাগগুলো মুছে যেতে যেতে শিশুর হাত ছুঁয়ে দেয়
তবু নিষ্পাপ ঈশ্বরের কোনো দায় নেই
দূর্বাঘাস
মরে যেতে পারি খুব সহজে
মরে যেতে যেতে বেঁচে থাকতে পারি হাজার বছর
হতচ্ছাড়ি-
আমি নষ্ট হতে হতে হলাম দূর্বাঘাস !
মাটির কলস
অনেকবার ভেঙ্গেছি তৃষ্ণায়!
অনেক দূরের পথ পায়ে পায়ে ধুলোমাখা পা
আমায় ডাকছে পথে উইঢিবি বোন ঝোপ নদীমুখ নারী
ভেঙেছি হাতের আঙুল ভেঙেছি সবুজ
ভেঙেছি চোখের মন ভেঙেছি আকাশ
আমাকে ভেঙেছি আমি কেবল ভেঙেছি আমায়
মাটির কলসি দেখে তৃষ্ণা ভাঙি আর ভেঙ্গে ফেলি আমার আমায়!
পায়ের কাছে জমা সতেজ সূর্যমুখি ধুলো
বুকের ভেতর শুধু সজনেডাঁটা ভোর
মাটির কলস ভরা নদীমুখ নারী!
এপিটাফে খোদাই করে লেখা
এফিটাফে খোদাই করে লেখা- কালো কালো অক্ষরে নীলমৃত্যুঘ্রাণ
চোখ ফেরানো যায়না
চোখের সামনে কেবল বাবার বাঙ্গময় মুখ
ঈশ্বর আর বাবা
বাবা আর ঈশ্বর একাকার একীভূত
যেনো হাত বাড়ালে ছোঁয়া যায় !
রাত জেগে হাবিজাবি কাটাকুটি
কবিতার অক্ষরে ধরা যায়না সব সুর
সেই চেনা মুখ
অভয় আঙুল
বুকজুড়ে সোঁদাগন্ধ মাটি !
বাবাকে আর ডাকা হয় না
সকাল-দুপুর-বিকেল
খাবার টেবিল, ইজি চেয়ার, আরজ আলী মাতব্বর রচনাসমগ্র
টিভির সংবাদ বুলেটিন, পত্রিকার তাজা ঘ্রাণ, চা-দোকানের বেন্সি
ফেলে আসা কর্মময় স্কুল, প্রিয় ছাত্র-প্রিয় সুধীমুখ
হাতের ঠকঠক লাঠি, পায়ের চপ্পল, মাস্ক, ফতুয়ার পকেটজুড়ে নামাজের টুপি
টেবিলের কোণায় রবীন্দ্রনাথ, সুকুমার সমগ্র, রোজ নামচার খাতা
সবকিছু ঠিকঠাক
শুধু বাবাকে ডাকা হয়না !
বাবার পায়ের কাছে একটি বড় মেহগনি গাছ !
দেলোয়ার হোসেন: কবি।