শুচি সৈয়দ ‘র একগুচ্ছ কবিতা

উষর প্রান্তরের ইহুদিরা

চলো যাই
গল্প-গুজবগুলো
শেয়ার মার্কেটে বেচে আসি!

চিন্তাশীল সুশীলসমাজ সূচকের উত্থান-পতনে
মধ্যরাতে টক শো-তে ঘেমে নেয়ে ওঠে-

অভিশপ্ত ইহুদিরা করুণার্দ্র চোখে
নির্নিমেষ চেয়ে থাকে- বাঙালপ্রজাতি
মনোহর কাফন পরে
ফ্যাশন প্যারেড করে
কেমন অবলীলায়
নিষিদ্ধ সুদের পাপকে
লাভের পণ্যে করে পরিণত-
শরীয়াসম্মত!

তাদের নিপুণ কর্মে
মিথ্যেগুলো- মিথ্যে নয়-
সত্যে পরিণত!
-শরীয়াসম্মত লাভ!
সত্যকে মিথ্যের সঙ্গে
মিথ্যেকে সত্যের সঙ্গে মিশ্রিত করে
সত্য বলে বেচা- শরীয়াসম্মত মুনাফা!

এই উর্বর গাঙ্গেয় ব-দ্বীপে
উষর প্রান্তরের ইহুদিরা
পলকহীন চোখে- নির্নিমেষ- প্রতিক্রিয়াহীন
চেয়ে থাকে!…

মনে রেখো, মন

ফেলে আসা দিনের শিশিরে
আমরা হারিয়ে গেছি নীলে
স্মৃতিহীন নগ্ন জনপদে
ধ্বনি-কিংবা-প্রতিধ্বনিহীন…

কখনো কি কারো বুকে কেউ
তুলেছিল সামান্য ঢেউ
কারো কি হৃদয় দর্পণে
ভাঙা কাচে করে চিকচিক…

কার চোখ, অশ্রুবিন্দু কার-
সংহারক স্মৃতি-সত্তার!

মন, তোমার চোখে একদিন একফোঁটা জলে জমে ছিল যে মায়া

সে এক ময়না’র গল্প
ভোলেনি তো, মন
ভালোবাসা সুখ নয়
কিংবা নয় শুধু বিস্মরণ

পাখিকে উড়িয়ে দাও
পাখিও উড়েই স্বস্তি চায়
চাতকের অনন্ত-তৃষ্ণা বৃষ্টিছাড়া
সমুদ্রের জলে কি মেটায়।

যাকে তুমি ভাবো সুখ, সে হচ্ছে
স্বর্গীয় সুষমা লোকে যাকে
বলে ভালোবাসা
এই আলোটুকু ছাড়া সমস্তই অন্ধকার।

যেমন তোমার চোখে একদিন
এক ফোঁটা জল
ম্লান করে দিয়েছিল
মূল্যবান হীরা দ্যুতিকেও
তার নাম মায়া!
মায়াময় সেই মেঘ, অশ্রুবিন্দু
এক ফোঁটা শিশির
জমাট বাঁধিয়ে বুকে অনড় পাথর
করে রাখো

সুখের প্রপঞ্চে তুমি
ঘোরো ভুল অরণ্যের ফাঁদে।
ভুলে গেছো- মন, অশ্রুবিন্দুর মুক্তোয়
আলো হয়ে ওঠা
জীবনের দ্যুতিময় মুহূর্তগুলিকে।

পুণ্যময় পরিপূর্ণ অনুভূতির মুহূর্তই-জীবন।

পাখি কি গিয়াছে উড়ে…
নিজেকে ভুলিয়ে রাখো
নিদারুণ আত্মপ্রবঞ্চনায়।

জাগো মন, জাগো, সেই বিস্ময় ভরা
স্বপ্ন জাগরণে
এখনো ময়না তার একমাত্র
মন, ‘মন’ ছাড়া কোথায়ও
রাখেনি
সময় গড়িয়ে যায় সময়প্রপাতে
উড়ে যাওয়া ময়নার বিধিলিপি
মন’ই নিয়তি…!

এখনো পাখিটি তার প্রতিটি সকাল
মনের স্পর্শে জাগে
জাগরণে কি যে দুঃসময়!

বিধিলিপি, মন

কোনোদিনই আকাশ ফাটিয়ে
বাতাস ফাটিয়ে
লোকালয়ে তুলে হৈ চৈ
‘আমি তাকে ভালোবাসি,
সে আমার
কেবলই আমার
আর কারও নয়’
এই কথা বলতে পারিনি
কোনোদিনই বলতে পারবো না
এ আমার বিধিলিপি
এবং নিশ্চিত, একই তারও।

শরীরের শিরা-উপশিরা
লক্ষ-কোটি পরমাণু ভেঙে
লিখছে আর ভাঙছে প্রতি পলে
ভালোবাসা
ভালোবাসি
মন

লতায়-পাতায় ঘেরা এ দেহের
হৃৎপিণ্ড ফাটিয়ে
মস্তিষ্কের সমস্ত নিউরন ফাটিয়ে
নির্বিকার
আমরা ‘বেঁচে আছি’

চিকিৎসর কি ওষুধ দেবেন
ওষুধ কি জানেন ঈশ্বরও?

প্রকৃত জীবন, মন

কেবল বয়সের দোষে রিপুগুলি
বাঘ হয়েছিল
তুমি সেটা নিবৃত্ত করেছো

আমিও বিস্ময়ের ধূলি কৌতূহলে
উড়িয়ে হয়েছি ধৃত
এটা সত্য নয়!

সময় পেরিয়ে এসে এ-সত্য
স্বীকার করো নির্ভয়ে

ভালোবাসা বেঁচে থাকে
কখনো মরে না
এমনকি মৃত্যুতেও
জেনো।

লোভ আর লালসার পরিণতি
তোমার চাইতে ভালো জানে কেউ?

আর কত করবে সতীদাহ
নষ্ট করে প্রকৃতজীবন?

শুচি সৈয়দ:
কবি ও সাংবাদিক। লেখালেখির সাথে জড়িত দীর্ঘ দিন। বর্তমানে দেশের অন্যতম দৈনিক যুগান্তর -এর সহকারী সম্পাদক হিসেবে কর্মরত। কাজ করেছেন আজকের কাগজ, দৈনিক মুক্তকন্ঠ, ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সম্পাদিত সাপ্তাহিক সময় সহ নানা গণমাধ্যমে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত কলাম নিয়ে বেরোয় তারগ্রন্থ ‘ কালাকালের কড়চা'(প্রমিথিউস-১৯৯১), কবিতার বই ‘চয়নের চোখ ও অন্যান্য লিরিক, (প্রমিথিউস-২০০১), ভালোবাসা, এইটুকু ছাড়া সমস্ত অন্ধকার (অনিন্দ্য-২০১০) দশ দিকে দশ দ্বার ডাকছে দুয়ার খুলে(অনিন্দ্য ২০১১),শূন্য করতলে লোনাজল(অনিন্দ্য ২০১২), ছাড়ার বই- বুর্জুয়া ম্যাজিক(স্বরাজ প্রকাশনী ২০০৮),গণতন্ত্র চিচিং ফাঁক (অনিন্দ্য ২০১২), ছোটদের বই- তোমাদের জন্য ছড়া ( প্রমিথিউস-১৯৯৭), কালো মেঘ থমকায় ( মা প্রকাশনীর ২০০৪)।
ছেলে: আহসানুল হক অর্ক, মেয়ে: শামীমা রওশন সামান্থা, স্ত্রী: রওশন আরা। শখ : বই পড়া, ভ্রমণ।

মন্তব্য করুন

এখানে মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন