ভর্তিযুদ্ধ প্রশমিত হয়েছে ক্লাউড ব্যবস্থাপনায়
আবদুল কাইয়ুম মাসুদ
৯ আগষ্ট ২০২০ ইংরেজি থেকে ২০২০-২১ সালের একাদশে ভর্তির আবেদন শুরু। করোনার প্রাদুর্ভাব পিছিয়ে এনেছে এ প্রক্রিয়া। স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকলে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ১ জুলাই, ২০২০ ইংরেজি থেকে ক্লাস শুরু হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো। বস্তুত গত মার্চ মাস থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বৈশ্বিক মহামারির কবলে পড়ে এ ভর্তি প্রক্রিয়ায় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিলো। আজ সেই উদ্বেগ উৎকন্ঠার সাময়িক অবসান হলো।
এবার করোনাভইরাস মহামারির কারণে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে ফেসবুক লাইভে। শিক্ষার্থীরাও স্কুল প্রাঙ্গণে না গিয়ে ফলাফল জানার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলো, আপনালয়ে। অবশেষে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নির্ধারিত দিনে বোর্ডের এসএমএস বা ওয়েবসাইট থেকে তারা জানতে পেরেছে বহুল কাঙ্ক্ষিত এ ফলাফল।
এরপর ভর্তির পালা। শিক্ষার্থী, অভিভাবগণ উদ্বেগ উৎকন্ঠায় ছিলো, এ মহামারিকালে কি হবে ভর্তি হওয়ার প্রক্রিয়া?
কর্তৃপক্ষ আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলো যে, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তির আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ১০ মে, ২০২০ ইংরেজি থেকে, আর শেষ হবে ২৫শে জুন। একই সাথে ক্লাস শুরুর তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিলো পহেলা জুলাই থেকে। কিন্তু এর মাঝে শুরু হয় মহামারি। এ পরিস্থিতি কবে ঠিক হবে? ঠিক না হলে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে কিনা তা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।
ইতোমধ্যেই ভর্তি প্রক্রিয়ার বিস্তারিত সূচি প্রকাশ করে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড।
দেশের সব সরকারি-বেসরকারি কলেজে আগামী ২০ অগাস্ট পর্যন্ত অনলাইনে একাদশ শ্রেণিতে আবেদন করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এবার শুধু (www.xiclassadmission.gov.bd) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করা যাবে। সোনালী ব্যাংক, টেলিটক, নগদ, বিকাশ এবং রকেটের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করা যাবে। ১৫ সেপ্টেম্বর ভর্তির এ কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা।
৭ হাজার ৪৭৪টি সরকারি-বেসরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণিতে মোট ২৫ লাখ আসন রয়েছে। এবার মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্য থেকেই একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করবে। মাধ্যমিক উত্তীর্ণ সব শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হলেও আট লাখ আসন ফাঁকা থাকবে। তারওপর কারিগরি বোর্ডের অধিনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখানেও এদের একটা অংশ ভর্তির সুযোগ পাবে।
ভর্তির পুরোপ্রক্রিয়া বোর্ড কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। অটোমেশন প্রক্রিয়ায় প্রদত্ত ক্রাইটেরিয়া অনুসারে সেখানেই শিক্ষার্থীদের আসন বন্টন হয়ে যাবে। কলেজ কর্তৃপক্ষ বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ কলেজে নিশ্চায়ণ করবে। সঠিকভাবে আবেদনের পর পছন্দমতো কলেজে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে কিনা তা নিয়ে দ্বিতীয় ধাপে নতুন করে উদ্বেগ উৎকন্ঠা শুরু হবে। তবে শিক্ষার্থীর মান, ঝোঁক-প্রবণতা লক্ষ্য করে কারিগরি বা জেনারেল সাইড এখনি নির্ধারণ করে দিতে পারলে তা শিক্ষার্থীর সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
একসময় ভর্তির আবেদন সংগ্রহ করা বা জমা দেয়ার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। এরপর ভর্তি পরীক্ষা হতো। পরীক্ষায় ভালো করলেও অনিশ্চয়তা ছিলো। কলেজ কর্তৃপক্ষের ওপর প্রভাবশালীদের নানামূখী চাপ, ছাত্র সংসদের কোটা ইত্যাদির কারণে মেধাবীদের বাদ দিয়ে কোন ফাঁকে কে ঢুকে পড়ছে তা মেধাবীদের শংকায় রাখতো। যে কারণে তখন পত্রিকার হেডিং হতো ভর্তি যুদ্ধ শুরু। ক্লাউড ভিত্তিক ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর এ যুদ্ধ প্রশমিত করেছে।
জানা গেছে, একজন শিক্ষার্থীকে কমপক্ষে ৫টি কলেজে পছন্দক্রম অনুসারে আবেদন করতে হবে। তবে সর্বোচ্চ ১০টি কলেজে পছন্দক্রম অনুসারে আবেদন করতে পারবে। মেধা এবং পছন্দক্রম অনুসারে তাকে নির্দিষ্ট কলেজে ভর্তির জন্য মনোনীত করা হবে। একাদশে ভর্তির জন্য সব শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, সংশ্লিষ্ট অপারেটরকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, এ বছর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিতে মুক্তিযোদ্ধা, প্রবাসী ও বিকেএসপি কোটা বহাল থাকছে। তবে, অন্যান্য কোটা নিয়ে নীতিমালায় কোনো কিছু উল্লেখ করা হয়নি। ভর্তি প্রক্রিয়ায় জটিলতা ও ব্যয় কমাতে এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে। শুধু অনলাইনে সর্বোচ্চ ১০টি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।
আবদুল কাইয়ুম মাসুদ: প্রভাষক, আইসিটি : কর্ণফুলী এ জে চৌধুরী কলেজ, চট্টগ্রাম।