মুক্তগদ্য


শিক্ষক দিবসের ভাবনা


ড.ওবায়দুল করিম


পুবাকাশ


হুম, এইক্ষেত্রে একজন রিকশা শ্রমিক ও শিক্ষক হতে পারেন! কারণ পিথাগোরাসের ‘ত্রিভুজের দুইটি বাহুর সমষ্টি, তৃতীয় বহু অপেক্ষা বৃহত্তর’ জানার আগেই রিকশাওয়ালা শর্টকাট রাস্তা ধরে গন্তব্যে পৌঁছুনোর ধারণা দিয়েছিলেন। অবশ্যই তিনিও শিক্ষক।

শিক্ষক কে? যিনি শিক্ষা দান করেন।
শিক্ষা কি? প্রকৃতি ও সমাজ জগতের ঘটনাসমূহের কারণ বের করা, ঘটনা ও তার কারণের সম্পর্ক নির্ণয় করা,এবং তার প্রয়োগে প্রকৃতি ও সমাজ জগত পরিবর্তন করার কাজ হলো, শিক্ষা।
শিক্ষক কে? যিনি প্রকৃতি ও সমাজ জীবনের , ঘটনাসমূহের মধ্যে কার্য-কারণ সম্পর্ক জানেন এবং তা অন্যকে জানান।
তাহলেতো, সমস্ত বিজ্ঞানীই শিক্ষক।কারণ, প্রকৃতির নিয়ম জেনে প্রকৃতিকে বদলানোর কাজটা করছেন তিনি। শেখা এবং তার প্রয়োগ জানান, তিনি।
হুম, এইক্ষেত্রে একজন রিকশা শ্রমিক ও শিক্ষক হতে পারেন! কারণ পিথাগোরাসের ‘ত্রিভুজের দুইটি বাহুর সমষ্টি, তৃতীয় বহু অপেক্ষা বৃহত্তর’ জানার আগেই রিকশাওয়ালা শর্টকাট রাস্তা ধরে গন্তব্যে পৌঁছুনোর ধারণা দিয়েছিলেন। অবশ্যই তিনিও শিক্ষক।
সবাই যদি শিক্ষক হবেন, তাহলে শিক্ষক দিবস কার নিমিত্তে?
শিক্ষা, যখন পৃথিবী বা প্রকৃতি থেকে, ভবনের দেয়ালের মাঝে, কাগজের পাতায় সঞ্চিত হলো , তখন ‘শিক্ষক’ নামের পেশাজীবীর উদ্ভব ঘটলো। এঁদের মৌলিক কাজ ,শিক্ষা নেয়া এবং দেয়া,অর্থাৎ বিতরণ। প্রয়োগের দায়িত্ব টেকনিশিয়ান ও টেকনোক্র্যাটদের। শিক্ষক তাই, রাজনীতি করেন না, করলে আর পেশাজীবী হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে শিক্ষক থাকেন না।
গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করবার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন নেই, তবে গাছে ফলের ফলন বাড়ানোর উপায় খুঁজতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন আছে।

সমাজ মানে হাজারো প্রতিষ্ঠানের সমাহার। সব প্রতিষ্ঠানই শেখায়। শেখার কাজ শুরু করে পরিবার আর শেষ করেন শিক্ষক। দুটোই প্রতিষ্ঠানের কাজ।কারণ,পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,দুইই তো প্রতিষ্ঠান।
আমরা বলে থাকি-শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। কেন?

পৃথিবীতে মানুষেরই সমাজ আছে। যদি আগুনের আবিষ্কার ও ব্যবহার না জানতো, তাহলে,তীর, ধনুক, লাঙ্গল বানাতে পারতো? মানুষ খাদ্য সংগ্রহকারী থেকে খাদ্য উৎপাদনকারী হতে পারতো? নিশ্চয় না। সমাজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি হাত ধরাধরি করে চলে। প্রাণী জগতে, সব প্রাণীই খাদ্য সংগ্রাহক, ফলে ওদের সমাজ নেই, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও নেই। আমরা খাদ্য ও অন্যান্য সামগ্রীর উৎপাদন ও বিনিময় করি- অর্থনৈতিক প্রাণী। আমাদের তাই, শিখতে হয়, শেখাতে হয়।শিক্ষা তাই, সভ্যতার ভীত।আর এই ভীত নির্মাণের প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্বে আছেন শিক্ষক। বর্তমানে ও প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে,জ্ঞানের ট্রান্সমিশনের দায়িত্বে থাকা, ব্যক্তিই শিক্ষক।

অক্টোবর ০৫,২০২১


ড. ওবায়দুল করিম: বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী। প্রাক্তন প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

মন্তব্য করুন

এখানে মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন