মিশরীয় শিলালিপি
অমরতার আকাঙ্ক্ষা
মুজিব রাহমান ।। পুবাকাশ
প্রয়োজন এবং শিল্প হিসেবে লিখন বা লেখা বিকাশের ইতিহাসে প্রাচীন মিশরীয়রা ছিল পথিকৃৎ জাতিসমূহের মধ্যে অন্যতম। আদিতে মিশিরীয় কবিতা বাদ্যযন্ত্রসহযোগে গীত হতো। ধারণা করা হয়, নিচের কবিতাটি খ্রিষ্টপূর্ব ১৫৭০ সাল এবং ১০৮৫ সালের মধ্যবর্তী কোন এক সময়ে রচিত।
অমরতার আকাঙ্ক্ষা সমাচ্ছন্ন করে রেখেছিল প্রাচীন মিশরীয়দের। ক্ষমতাবানদের মৃতদেহ মমি করে সযত্ন সংরক্ষণ প্রয়াস সে-ইতিহাস বহন করছে। মিশরের শাসকদের বিশাল সব নির্মাণ প্রকল্পের পেছনে ব্যয়িত হয়েছিল তাদের অঢেল সম্পদ। বিস্মৃতির নির্দয় হাত থেকে নিজেদের নাম বাঁচিয়ে রাখার জন্যে তাদের চেষ্টার অন্ত ছিল না। অমরতা লাভের দুর্মর আকাঙ্ক্ষায় তাদের স্ক্রাইব বা লিপিকররা পাথরে আর প্যাপিরাসে ছোটো ছোটো চিত্রাক্ষরে, চিহ্ন, ছবি আর সংকেতে লিখতো বিভিন্ন বিবরণ এবং এ সবের মাধ্যমে বিশাল দূরত্বে বিনিময় করতো বহুবিধ তথ্যাদি। মূলত, এ-সব চিত্রলিপিধর্মী সাংকেতিক লিখন বা ‘হাইয়ারোগ্লিফ’ ধারণ করে আছে মিশরীয় সভ্যতার যথাযথ গৌরবোজ্জ্বল উত্থান ও বিকাশের ইতিহাস। শত শত বছর টিকে আছে মিশরিয় এ-সব রচনার মূল পাঠ। সমাধি সৌধ, নানান স্মৃতিফলক এবং শিলাখণ্ডে উৎকীর্ণ কবিতা, গল্প, ও স্রষ্টাকে নিবেদিত প্রার্থনাগান তাদের অমরত্ব সাধনার ইতিবৃত্ত ধরে আছে।
“লেখকদের অমরতা” হতে অংশ বিশেষ
মানুষ ক্ষয়ে যায়, তার মৃতদেহ ধূলো,
শেষ হয়ে গেছে তার সকল স্বজন;
তবু একটি বই স্মরেণ্য রেখেছে তাকে,
আবৃত্তিকারের মুখে মুখে।
সুনির্মিত বাড়ির চেয়ে অধিকতর ভালো একটি বই,
পশ্চিমা সমাধি-প্রার্থনালয়ের চেয়েও;
পোক্ত প্রাসাদ থেকেও ভালো,
ভালো ভজনালয়ের খোদাই পাথরের চেয়েও!
হার্ডাডেফের মতো কেউ কি আছে এখানে?
তাহোতেপের মতো আছে কি আর কোনো জন?
মৃত্যু ভুলিয়ে দিয়েছিল তাদের নাম
কিন্তু বই করেছিল স্মরেণ্য তাদের!
মুজিব রাহমান : কবি-প্রাবন্ধিক-অনুবাদক। সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ।