একগুচ্ছ কবিতা


সৈয়দ আহমদ শামীম


পুবাকাশ


 

একটিই চরণ এই কবিতার

বাপকে নিয়ে মেয়েদের আদিখ্যেতা অন্তহীন
ঔরসের এমন অনন্তমাত্রিক জাগতিক লীলাউপহার
বাপেরা পেয়ে থাকে

চোখে দেখা প্রতিটা ধর্মোপদেশ এক সূক্ষ্মাতি সুতোরেখা টেনে এ লীলার নিদারুণ সংহতি এঁকে পরিবার টিকিয়ে রেখেছে

ফলে মেয়েরা কী দারুণ বাপকে পেয়েছে

ফলে এক বিষণ্ণ কিশোরী বাপকে নিয়ে রচিত
জগতের শ্রেষ্ঠ কবিতার একটি
বাংলা ভাষায় পয়দা করে দিয়ে
তার অপার বেদনা লয়ে অজানিত হয়ে রয়েছে

যতদিন বাপ সম্পর্কের সারাৎসার দুনিয়া থেকে বাতিল হবে না সেই কবিতার একটি চরণ
প্রকট উৎকণ্ঠাকে ভালোবেসে আমাদের শ্রুতির তারে ঝুলিয়ে রাখবে-
আব্বু তুমি কান্না করতেছ যে

একটিই চরণ এই কবিতার

জুন ১৭

লোল জীবন

মানুষের জীবন বিস্ময় চেয়ে ধ্যান বসে থাকে

আমি আজীবন তোমার পাশে ছিলাম
একবার যদি যথাযথ প্রশংসা করতে আমার
যেভাবে উচ্চঅঙ্গ অপরিচয় শিল্পী
নিজের চোখের সামনে তার গোপন কুঠুরি হতে নিজের কাছে একান্ত শ্লীল অথচ অপরে শরমপ্রবণ
সুর খুলে এনে নিজেরই আত্মপ্রেম উদগ্র বাসনার বুভুক্ষার কাছে রাখে, আমি তোমায় ভালোবাসতাম!
সেই কল্পনার ভালোবাসার স্মৃতি, তুমি কি রয়েছ আজ মানুষের প্রচলিত সাধারণ মহিমান্বিত সমাজে
যেখানে তোমার বিস্ময়কর জীবনের আশেপাশে
অচল পয়সার মনে প্রাচীন গৌরবের স্মৃতির মতো
বসে আমাকে থাকতে হত!
তোমাকে আমি ভালোবাসতে পারি নাই বাসনার ব্যাপ্ত লালসার গোপন সুকৃতে

মনে হয় তুমিও, দাসানুদাস এক ভিখারির লোলজিব জীবন পাহারা দিয়েছ
প্রতিদিন
পল পল প্রতিটি জীবন

জুন ৬,২০২২

সীতাকুণ্ডে আগুন °

যাঁরা জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে দুনিয়া ছেড়ে দিয়েছে
বিশ্বাস অনুযায়ী তাঁদের অধিকাংশ জান্নাতে উড়ে বেড়াচ্ছে
ওখান হতে দেখছে তার হাতের কব্জি অভিমান করে পড়ে আছে
তার পা জোড়া বিভিন্ন প্রান্তে ছিঁড়ে পুড়ে আছে
বেশ আনন্দে আকাশের সীতাকুণ্ডলগ্ন কিনারে এসে দেখছে এটা কী ধরনের ঘটনা
কিছু দৃশ্যের সংশয় তাদের কৌতুক বোধ দিচ্ছে
লাশের দর নির্ধারণে বিভিন্ন পক্ষের প্রাণান্ত ব্যর্থতায় একটু চিন্তিত হলেও জোরে অট্টহাস্যে তারা এক ছো মেরে জান্নাতে সদ্য পাওয়া নির্ভার দেহটা একেবারে প্রাচীন দাক্ষিণাত্যর কাছাকাছি গিয়ে দম খুলে হেসে নিয়েছে
ঘুরে ঘুরে তারা আবার ডিপোর কাছে ফিরে আসে
সীতাকুণ্ড এরিয়া জান্নাতের তুলনায় তেমন কিছু না হলেও সীতাকুণ্ডের আকাশ বরাবর তারা ঘুরে ঘুরে থাকে
তাদের দুনিয়ার ভাইদের নেগেটিভ রক্ত উপহার নিতে
চকবাজার অষুধের দোকানে বিনা পয়সার মলম
স্কুল কলেজের দুষ্ট গুলোর রক্তদান মিছিল দেখতে
তারা সীতাকুণ্ডের বাতাসের সাথে মিশে মিশে আছে
আর তারা কষ্ট পাচ্ছে

বিলম্ব যাত্রীদেরে জন্যে যারা পুড়ে পুড়ে দুনিয়ার অরাজকতার কাছে ঝুলে রয়েছে যে

সীতাকুণ্ড

যদ্দুর জানি,
প্রতিটি লাশ একবার বিক্রয়যোগ্য;
স্যার!
দরটা আরএকটু বাড়ানো যায় না! স্যার,
আমাদের কল্যাণফান্ড প্রায় অব্যবহৃত!
সরি স্যার!
আমার আসলে একটু লজ্জা লাগছে স্যার!
দেখুন না কব্জিসহ কার কোথাকার পাঁচটি আঙুল
পুরো অভিমানের মতো আমাদের কল্যাণফান্ডের দিকে তাকিয়ে আছে, একবার দেখুন না স্যার!
পুরো মানুষটি নয়, বাকী হাত, উড়ে যাওয়া পা,কলমা পড়ার ঠোঁট সবাই একসাথে এসে
জটলা পাকায় নি, স্যার!

একা পাঁচটা আঙুল শুধু অর্ধেক কব্জির সাথে

সেই হাত

যেই পৃথিবীতে হোক এই পৃথিবীতে একদিন
এক হাত ফিরে আসবে
মনোবোধ জাগার অনেতিহাসকালে যে বোধ রাধারমণ
গফুর হালীর মনে একআধফোঁটা ফোঁটা জেগেছিল
মদুনাঘাট কিবা সুলতানপুর জনপদঘিরে অজর রাতের ঊর্ধ্বে যে আকাশ মানুষের দীনতা ঢেকে নিচে মানুষের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আশার অতল বৈভব সাজিয়ে জলবাতাস নদীর প্রবাহে শরীর ভাসায়ে রেখেছিল আর এক হাত তার প্রাণের রক্তে সিনান করে হাওয়ার পিছে পিছে হারিয়ে গেল
সেই হাত
একআধবার মনুষ্য রচনা সংগীতের বৈকল্যের ইশারার পিছে পিছে ঈষৎ দেখা দিয়েছিল

জুন ৩, ২০২২

শিল্প যাদুবিদ্যা

প্রত্যেক অপরাধের মাফ আছে
আল্লাহর কাছে কেবল আল্লাহর শক্তি ও মর্যাদা লঙ্ঘনের মনোভাব পোষণের ব্যতীত
এই সহজ আইন মানুষ সৃষ্টিগত ভাবে জানে বোঝে কেবল তবু মানুষের পক্ষেই এটা না জানা না বোঝার মনোভাব পোষণ
মনোভাব অনুযায়ী কথা জোড়া ও প্রচলনের মতো আশ্চর্য জাহিলিয়াত তৈরি করা সম্ভব হয়
ফলে ব্যাপক পরিমাপ শিল্প রচন প্রসার ঘটে
প্রত্যেক শিল্পী সৌন্দর্যের অসারতা জানে
যেহেতু শিল্প যাদুবিদ্যা তাই বর্ণ অক্ষর তুলি কণ্ঠ বাকচাতুর্য ইত্যাদির সাথে শয়তানের ঘনিষ্ঠ বন্ধন হয়
শয়তান, শয়তান নামটা মুছে দিয়ে কলাবৈদগ্ধ ঘটিয়ে তোলে
আমি সুরের শয়তানিকে সহজে পরাস্ত করতে জানি না
আল্লাহর অনিবার্য হদ্ জারি রাখা কিছু
সম্ভব হয়ে থাকে হয়তো রহমতের কারণে
শিল্পী জানে নারী কমনীয় কোমলতার বাস্তবতা মানুষের মাঝে কেউ কেউ নিপুণ ভাবে সিদ্ধ ভাবে ডীল করতে পারে কিন্তু তারা শিল্পী নয়
অধিকাংশ প্রকৃত শিল্প প্রচল শিল্পীর পক্ষে প্রত্যক্ষ ও উপলব্ধি করা কঠিনতর যেহেতু মানুষ ফালতু সে অভিনয় মূলত নিজের সাথে করতে বাধ্য হয়
তবে টলস্টয় অনন্য
ফাদার সিয়ের্গি সমস্ত গৌরব চোখের সামনে রেখেও তাকে ভিক্ষুক মনে করে কারুর একটি সামান্য পয়সা দানের আর গ্রহণের মুহূর্তটি যারা দেখেছে তারা জানে এই ক্ষণ প্রকৃত শিল্পীর দ্বারা রচন সম্ভব
টলস্টয় আল্লাহর সহজ অভিভাবকত্ব জন্মগতভাবে স্বীকৃতির আনন্দের ভেতর মানুষ হয়েছিলেন

 


সৈয়দ আহমদ শামীম : নব্বই দশকের কবি ও চিন্তক।

১টি মন্তব্য

  1. দারুণ সুন্দর প্রতিটি কবিতা।
    কবিকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।

মন্তব্য করুন

এখানে মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন