বই আলোচনা
মার্কসবাদ খন্ডনে ড. মুঈনুদ্দীনের বিস্ময়কর তাত্ত্বিক আর্গ্যুমেন্ট।। মনোয়ার শামসী সাখাওয়াত।।
পুবাকাশ
মার্কসবাদের ট্রেডমার্ক হিশেবে যে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ সাধারণভাবে পরিচিতি পেয়েছে তা কিন্তু মার্কসের উদ্ভাবন নয়। এই তত্ত্বটি আসলে মার্কসের বন্ধু ও সহযোগী এঙ্গেলসের প্রস্তাবনা। মার্কস আসলে জর্মন দার্শনিক ঐতিহ্যে একজন নিও-হেগেলিয়ান হিশেবে সত্তার অধিবিদ্যাকে বস্তুর অধিবিদ্যায় প্রয়োগ করতে চেয়েছিলেন। এই উদ্দেশ্য সাধনে তিনি মানব ইতিহাসকে এক শ্রেণি সংগ্রামের তত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করেছিলেন। কিন্তু এঙ্গেলস এই দ্বান্দ্বিক ইতিহাসের তত্ত্ব থেকে এক সাধারণ দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ প্রস্তাব করেন। এটির সঙ্গে মার্কসের সরাসরি কোন সম্পর্ক পাওয়া যায় না।
এই দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের ভিত্তি হিশেবে কাজ করে হেগেলের থিসিস-এন্টিথিসিস-সিনথেসিস এই ত্রিমাত্রিক প্রক্রিয়াটি। হেগেলের এই সত্তাভিত্তিক প্রক্রিয়াটিকে এঙ্গেলস বস্তুজগতে প্রয়োগ করতে চেয়েছিলেন। আর এই প্রক্রিয়াটিই মার্কসবাদের মৌল দার্শনিক প্রত্যয় হিশেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। ড. মুঈনুদ্দীন আহমদ খান হেগেলের এই মৌলিক চিন্তার আলোকে এঙ্গেলস প্রস্তাবিত দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের এক ক্রিটিক উপস্থাপন করেন।
ড. মুঈনুদ্দীন বলেন যে থিসিস-এন্টিথিসিস-সিন্থেসিসের এই প্রক্রিয়াটি হল একটি ত্রিভুজ-সদৃশ জ্যামিতিক ধারা। এর প্রথম উপাদান থিসিস হল একটি সরল রাশি। দ্বিতীয় উপাদান এন্টিথিসিসও হল একটি সরল রাশি। কিন্তু তৃতীয় উপাদান সিন্থেসিস হল প্রথম ও দ্বিতীয় দুটি রাশির সংশ্লেষে একটি জটিল রাশি। কাজেই এই জটিল সিন্থেসিসের পক্ষে আর পরবর্তী পর্যায়ে একটি সরল থিসিসে রূপান্তর সম্ভব নয়। অথচ এই জ্যামিতিক ধারার অগ্রগতি/প্রগতির জন্য সেটি হওয়া একটি আবশ্যিক শর্ত। ড. মুঈনুদ্দীন মনে করতেন যে যেহেতু সেটি ঘটা সম্ভব নয় তাই এই পর্যায়ে প্রক্রিয়াটি এত জটিল হয়ে যায় যে তা আর মানুষের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে না থেকে তার আওতার বাইরে চলে যায়। মানুষের জন্য বিভিন্ন সমস্যা ও বিপর্যয় তৈরি করে।
এই তত্ত্বের উল্লেখিত সমস্যা নিরসনে ড. মুঈনুদ্দীন যে বিকল্প প্রস্তাবটি উপস্থাপন করেন তা হল থিসিস-এন্টিথিসিস এই দুই সরল রাশির একটি গাণিতিক ধারা। এই গতিষ্মান ধারায় দুইটি সরল কিন্তু বিপরীতধর্মী উপাদান পরস্পর সনিষ্ঠ হয়ে থাকে। ফলে কোন তৃতীয় জটিল রাশি তৈরি হয় না এবং কাজেই এই ধারাটি সবসময় মানুষের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থেকে সুষমা ও ভারসাম্য বজায় রাখে। ড. মুঈনুদ্দীন এভাবে ইবনে খালদুনের এই দ্বিমাত্রিক গাণিতিক ধারা ও তত্ত্বের সাহায্যে হেগেল এবং এঙ্গেলসের এই ত্রিভুজ-সদৃশ জ্যামিতিক ধারা ও তত্ত্বের পর্যালোচনা করেন।
সংক্ষেপে এটিই হল মার্কসবাদের চিহ্ন স্বরূপ যে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ তা খন্ডনে ড. মুঈনুদ্দীনের বিস্ময়কর তাত্ত্বিক যুক্তিবিন্যাস বা আর্গ্যুমেন্ট।
বিস্তারিত জানতে হলে পড়ুন:
ড. মুঈনুদ্দীন আহমদ খান,
পলিটিকাল ক্রাইসিস অফ দ্য প্রেজেন্ট এইজ: ক্যাপিটালিজম, কমিউনিজম এন্ড হোয়াট নেক্স্
বায়তুশ শরফ ইসলামিক রিসার্চ ইন্সটিটিউট,
চট্টগ্রাম, ১৯৯০
মনোয়ার শামসী সাখাওয়াত: প্রাবন্ধিক ও গবেষক।